সাহিত্য ডেস্ক:
চলতে চলতে কখন জানি বয়সের শেষভাগে চলে এসেছি
আর মাত্র মাইল ত্রিশ বাকি
তারপর পিচঢালা রাস্তাটা পেরিয়ে
পৌঁছে যাবো কাঁচা রাস্তার কাছে
স্টিয়ারিংটা এবার শক্ত হাতে ধরতে হবে
কোনো রকম ভুল করা চলবে না,
ব্রেকে পা দিয়ে ধীরগতিতে চলতে হবে
কাঁচা রাস্তাটা বড্ড পিছলে
এই রাস্তায় মানুষজন অনেক কম
কেউ পিছলে পড়ে গেছে,
কারোবা পিচঢালা রাস্তার শেষভাগে এসেই
গাড়ির ইঞ্জিনটা আচমকা বন্ধ হয়ে গেছে,
কাঁচা রাস্তায় এসে মনে পড়ে গেল চন্দনার কথা
সে বলেছিল, আমার বাড়ি কাঁচা রাস্তার শেষ মাথায়
যখন তোমার সময় হবে
তখন ঘুরে যেয়ো আমার বাড়িটাতে
কুঁড়েঘর তালপাতার ছাউনি
জারুল গাছের নিচে বসতে দেবো পিঁড়ি পেতে
মাটির চুলোয় তখন গরম ভাতে উতলে ওঠা
পালের পোষা মোরগের ঝোল নতুন আলু দিয়ে
ক্ষেত থেকে উঠিয়ে আনা তাজা শিমের ভর্তা।
চন্দনা, আমি তোমার বাড়ির খুব কাছাকাছি
যে কোনো সময় চলে যাবো তোমার কাছে
তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে সেই মাঝবয়সে,
কত চেষ্টা করেছি তোমার কাছে যাবার জন্য
পারিনি, ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছি ঘরে।
এখন আর ব্যর্থ হবো না
আমি এখন বয়সের দোরগোড়ায়
কিছু মাইল গেলেই পৌঁছে যাবো তোমার কুঁড়েঘরের অতিথি হয়ে।
মখমলের মতন তুলতুলে নরম সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে
সাদা সাদা মেঘেদের আনাগোনা দেখতে আমার ভালো লাগে
ইচ্ছে হয় বুকের বা’পাশে রেখে দেওয়া নীলখামের চিঠির সাথে
একদলা সাদা তুলতুলে মেঘ মিশিয়ে দিয়ে
তাকে পাঠাবো বলে লিখে রেখেছি একশ একটা চিঠি
যত্নে রেখে দিয়েছি ন্যাপথলিন দিয়ে
সাথে রেখেছি একশ একটা কালো গোলাপ,
সে আসবে বলেছিল,
সবুজ ঘাসের গালিচায় শুয়ে আকাশ দেখবো দুজনে মিলে
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামবে
আবির মাখা পশ্চিম আকাশ
তার ঘারে মাথা রেখে পূর্ণিমা দেখবো,
রাত কেটে সোনালি সূর্য ওঠে
চিড়ল পাতার ফাঁক গলে সোনালি আলো এসে ঘর ভরে যায়।
টলমলে স্রোতধারায় হংসদলেরা খেলা করে
ডাহুক ডাকে অশ্বত্থের ডালে
আমি অপেক্ষায় রই
আমি অপেক্ষায় থাকি
আদি থেকে অনন্ত কাল অবধি,
নীলখামে চিঠি রাখি সাথে কালো গোলাপ
আকাশ থেকে এক টুকরো মেঘ চেয়ে নিই
শিশি ভর্তি করে শিশির রাখি রোজ
এক জোড়া জোনাকি আর জোছনার আলো,
আমি অপেক্ষায় রই
অপেক্ষার প্রহর গুনি
আদি থেকে অনন্তকাল
সে আসবে ধীর পায়ে।
আমি চাই তুমি বেঁচে থাকো
তোমার মৃত্যু হোক
কিন্তু জীবন সায়াহ্ন না আসুক
তোমার একটা ঘর হোক
তোমার একটা প্রিয় মানুষ হোক
ভালোবাসারা বৃষ্টির মতন ঝুমঝুমিয়ে পড়ুক তোমার ঘরের চালে,
তোমার ঘরের পাশের
স্রোতিস্বিনী নদীর ধারা বয়ে চলুক অবিরত,
জোনাকিরা ঘোর অমাবস্যাতে আলো জ্বালুক তোমার ঘরে
জারুল ডালের ফাঁক দিয়ে দুধসাদা
জোছনারা আলোকিত করুক তোমার আঙিনা,
হাওয়ায় ভেসে যাওয়া প্রেমেরা এসে তোমাকে জীবন্ত করুক,
তুমি এক কাপ ধোঁয়াটে চা আর কবিতার খাতা নিয়ে
বেঁচে থাকো তোমার প্রিয় মানুষটির সাথে।