প্রতিদিন ডেস্ক:
দ্বাদশ সংসদের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শপথ নিয়েছে। শেখ হাসিনা তার টানা চার মেয়াদের মন্ত্রিসভায় বড় চমক দেখিয়েছেন।
একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন হেভিওয়েট কয়েক মন্ত্রী। এ নিয়ে দেশজুড়ে সব মহলে নানা আলোচনা চলছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব মাহবুবুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট যে তালিকা প্রকাশ করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিগত মন্ত্রিসভার ৩০জন সদস্য বাদ পড়েছেন।
বিগত মন্ত্রিসভায় পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন, অথচ এবারের মন্ত্রীসভায় ঠাঁই হয়নি এমন ব্যক্তিরা হলেন – কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পরিকল্পনা-মন্ত্রী এম এ মান্নান।
এছাড়াও বাদ পড়েছেন বর্তমান পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
এ তালিকায় আরো আছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রিসভা গঠনের পুরোপুরি এখতিয়ার সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি কাকে অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং কাকে বাদ দেবেন সেটি তার এখতিয়ার। তবে, বেশ কিছু মন্ত্রীর বাদ পড়ার কারণ নিয়ে দলের ভেতরে নানা আলোচনা ও অনুমান করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, এই মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
প্রথমত, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে মন্ত্রী গঠন করা। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো মন্ত্রিসভা হয়েছে তার সবগুলোতে নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলটির নেতারা বলছেন।
দ্বিতীয়ত, আঞ্চলিক হিসাব-নিকাশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাতে মন্ত্রিসভার প্রতিনিধিত্ব থাকে, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
তৃতীয়ত, দীর্ঘদিন মন্ত্রিসভায় থাকা ব্যক্তিদের এবার কম বিবেচনা করা হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
চতুর্থত, এবারের মন্ত্রিসভায় কেউ কেউ স্থান পেয়েছেন, যারা প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, যারা বাদ পড়েছেন তারা যে আবার ফিরে আসবেন না— এমন কোনো কথা নেই।
তিনি বলেন, তারা হয়তো কিছু দিন পর ফিরেও আসতে পারেন। যারা বাদ পড়েছেন, তারা আবারও ফিরে আসতে পারেন। সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এবারের মন্ত্রিসভায় পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে যারা নতুন এসেছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় ডাক পাওয়া তার জন্য একবারেই অপ্রত্যাশিত।
তিনি বলেন, আমি কল্পনাই করতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর যে আশা সেটি যাতে আমি ফুলফিল (পূরণ) করতে পারি। গতকাল যখন ক্যাবিনেট ডিভিশন থেকে ফোন এলো, তখন আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে গেছি, নার্ভাস হয়ে গেছি।
আমি হয়তো সিনসিয়ারলি কাজ করেছি সারাজীবন, উনি হয়তো দেখেছেন।
চিকিৎসক সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত পরিচয় রয়েছে। অনেকে মনে করেন তিনি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
এ বিষয়টি মন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছে কিনা? এমন প্রশ্নে সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি ঠিক বলতে পারব না।
অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, কয়েকটি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীদের কথাবার্তা ও কাজ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কোন প্রেক্ষাপটে কোন কথা বলতে হবে সেটি কোন কোন মন্ত্রী বুঝতে পারেননি।
তাদের ‘হালকা মন্তব্য’ সরকারকে একটা ‘বিব্রতকর জায়গায়’ নিয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন।
“প্রতি পাঁচ বছর পরপর নতুন ক্যাবিনেট হয়। কেউ কেউ পুনরায় নিয়োগ পান, আবার কেউ কেউ পুনরায় নিয়োগ পাননা।
কেউ কেউ আবার পরবর্তীতে নিয়োগ পান। সেক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে বিষয়টি ডিল করছেন,” বলেন অধ্যাপক সাদেকা হালিম।সূত্র: বিবিসি বাংলা।