প্রতিদিন ডেস্ক:
গাজায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ হতাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে শত শত বহুতল ভবন। ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। নির্বিচারে ইসরায়েল বোমা,কামানের গোলা, রকেট ও যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।
যুদ্ধ শুরুর প্রথম দুই মাসে গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলায় যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে, তা জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের ২০টি দেশে এক বছরেও সৃষ্টি হয় না।
গতকাল মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন এ তথ্য জানিয়েছে। গবেষণায় কেবল কার্বন নির্গমনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে প্রথম ৬০ দিনে ২ লাখ ৮১ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। দেড় লাখ টন কয়লা পোড়ালে যে পরিমাণ কার্বন উৎপন্ন হয়, দুই মাসে ইসরায়েলের হামলায় সে পরিমাণে হয়েছে।
বিমান, ট্যাঙ্ক ও অন্য যানবাহনের পাশাপাশি বিস্ফোরিত বোমা, কামান ও রকেট থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইডকে হিসাবে নিয়েছেন গবেষকরা।
তবে তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী অন্যতম প্রধান গ্যাস মিথেনসহ অন্য গ্যাসগুলোকে হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করেননি। তারা জানান, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কার্গো বিমান থেকেও বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়েছে।
অন্যদিকে যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলে হামাসের রকেট হামলায় নির্গত ৭১৩ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড আনুমানিক ৩০০ টন কয়লার পোড়ানোর সমান।
যুদ্ধের কারণে এত বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হলেও তাতে দৃষ্টি নেই বিশ্বনেতাদের। বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গমনের পাশাপাশি গাজার চলমান যুদ্ধ নজিরবিহীন দুর্ভোগ, অবকাঠামো ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ।
এমন এক সময় এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলো, যখন সামরিক বাহিনীর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। জলবায়ু সংকট নিয়ে আলোচনাকালে প্রায়ই বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। এ ছাড়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায়ও বিষয়টি উপেক্ষিত ও হিসাবের বাইরে রাখা হয়।
সোস্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কে প্রকাশিত এ গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বেঞ্জামিন নেইমার্ক বলেন, যুদ্ধের সুবৃহৎ নেতিবাচক প্রভাবের এটি সামান্য নমুনা।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহুদিন পর পর্যন্ত কার্বন নির্গমন ও বৃহত্তর বিষাক্ত পদার্থের কিছু অংশের প্রভাব থেকে যাবে। এর আগে এক গবেষণায় পুরো যুদ্ধ চেইনে উৎপাদিত কার্বন পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি উল্লেখ করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জলবায়ু নীতিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ক্লাইমেট অ্যান্ড কমিউনিটি প্রজেক্টের (সিসিপি) সঙ্গেও যুক্ত এ গবেষক বলেন, সামরিক বাহিনীকে পরিবেশ ইস্যুর বাইরে রাখায় তারা দায়মুক্তি নিয়ে দূষণ ঘটায়।
তাদের যুদ্ধবিমান বা ট্যাঙ্ক থেকে নির্গত কার্বন হিসাবের বাইরে থেকে যায়। এটা বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
গাজায় যে ১ লাখ ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো পুনর্নির্মাণ করতে গেলে কমপক্ষে ৩০ টন গ্রিনহাউস গ্যাস সৃষ্টি হবে। এটা নিউজিল্যান্ডে সৃষ্ট বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাসের সমান এবং শ্রীলঙ্কা, লেবানন ও উরুগুয়ের মতো ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলের চেয়ে বেশি।