ময়মনসিংহে চাষ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের মেকং পাঙ্গাস
রিপোর্টারের নাম :
-
আপডেট সময়:
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
সময় 8 months আগে
-
৯১
টাইম ভিউ
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পুকুরে রয়েছে ১২০ থেকে ১৬০ কেজি ওজনের বিশাল ৫০টি ‘ম্যাকং জায়ান্ট ক্যাটফিস’। এই মেকং জাতের একেকটি পাঙ্গাস মাছ তিনশ কেজি ওজনের উপরে হয়ে থাকে।
অনেকের কাছে অবাক বিস্ময়ের হলেও এই লংকা কাণ্ড ঘটিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিন্তু মহাবিপন্ন এই মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দেশীয় বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন,এর প্রজনন সফলতা অর্জিত হলে দেশে পাঙ্গাস উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে।
একটি পাঙ্গাস মাছ, যার ওজন হয়ে থাকে ৩০০ কেজি,বর্তমানে বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে রয়েছে ১৬০ কেজি ওজনের পাঙ্গাস মাছ।এটি‘মেকং জায়ান্টক্যাটফিস’ নামে পরিচিত।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং অববাহিকায় এই প্রজা তিটির প্রাকৃতিক আবাসস্থল মেকং নদীর মূল স্রোত, যেখানে পানির গভীরতা ১০ মিটার বা তার চেয়ে বেশি। এই মাছটি ২০০৫ সালে বিশ্বের অন্যতম স্বাদু পানির বৃহত্তম মাছের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করে।
কিন্তু অতিরিক্ত আহোরণ এবং বাসস্থানের ক্ষতির কারণে এটি এখন বিপন্ন প্রায়।রূপালী ধূসর রঙের বৃহৎদাকার এই পাঙ্গাস মাছ এটি ‘মেকং জায়ান্টক্যাটফিস’ নামে সমধিক পরিচিত।
মেকং নদীর অববাহিকার পাওয়া যায়। প্রাচীন কাল থেকেই এই মাছটি থাইল্যান্ড ও লাওসের জনগনের কাছে ‘প্লাবুক’ নামে পরিচিত।বিপন্ন প্রায় এই প্রজাতিটি সিলরিফরমেস শ্রেণীর পাঙ্গাসিডেই গোত্রের পাঙ্গাসাইনোডন এর অর্ন্তভূক্ত।এর বৈজ্ঞানিক নাম পাঙ্গাসাইনোডন গিগাস।
বিশাল আকারের পাঙ্গাস ঝাঁকের জলকেলি মেকং নদীর কুলে নয়, বাংলাদেশের পুকুর কিনা রায়। পৃথিবীর সবেচেয় বড় জাতের এই পাঙ্গাস বাংলাদেশে আসে ২০০৬ সালে থাইল্যান্ড থেকে।
বেড়ে ওঠে ত্রিশালের একটি হ্যাচারিতে। তবে ২০১৫ সালে ৫০টি মাছ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে সংগ্রহ করে লালন পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো.খলিলুর রহমান বলেন, মেকং জায়ান্ট পাঙ্গাস মেকং নদীর একটা মাছ। মেকং নদীর চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম হয়ে এটাইয়োলো সাগরে পড়েছে। সেই নদী থেকে এই মাছটি নিয়ে এসেছিলেন ত্রিশালের রেনি ফিসারিজের কর্ণধার রেজা আলী।
উনি আমাকে ৫০টি মাছ দিয়ে ছিলেন। এ মাছ গবেষণা করে পোনা উৎপাদন করা। রাষ্ট্রীয় এই মাছ গবেষণার আতুঁড় ঘরে এখন ১৭ বছর বয়সি ৫০টি পাঙ্গাস মাছ আছে। যাদের ওজন ১২০ থেকে ১৬০ কেজি। গবেষণা বলছে, এই মাছ তার জীবন কালের ১৭ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত। এই মাছের চোয়াল ও দাঁত নেই।
এটি তৃণভোজী কিন্তু রাক্ষুসী নয়। মাছটি পানির নিচে পাথর কিংবা নুড়ি স্তরে থাকতে পছন্দ করে।একটি পরিপক্ক মা মাছ থেকে প্রজনন কালে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ লাখ ডিম পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আসফ উদ দৌলাহ বলেন, যে মাছটি এখন বিডিং উপযুক্ত হয়েছে, তার প্রতিদিন ৫ ভাগ বডিবেজ। এটা বাংলাদেশে ১০০ কেজি ওজন হলে প্রতিদিন ৫ কেজি খাবার দিতে হবে।
এটাকে পানি উঠা নামা করা এর প্রোটিন মাফিক খাবার দেয়া, প্রতিদিন খাবার দেয়া এবং এর পানির কোয়ালিটি যাতে ভালো থাকে তার ব্যবস্থা করা।
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনাউৎপাদন সম্ভব হলে, এই পোনা মাত্র ১ বছরে ৯ থেকে ১২ কেজি ওজনের হয়। যা দেশি পাঙ্গাসের তুলনায় ৬ গুন বেশি বাড়ে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. জুল ফিকার আলী বলেন,মেকং জাতের একেক টি পাঙ্গাস মাছ তিনশ কেজি ওজনের উপরে হয়ে থাকে।
আমাদের পুকুরে ৫০ টি মেকং জাতের পাঙ্গাস মাছ রয়েছে। সম্ভাবনাময় এই মাছ টির কৃত্রিম প্রজননে সফলতা অর্জন সম্ভব হলে চাষি পর্যায়ে পাঙ্গাস উৎপাদনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটবে।
বিস্তর কাজ এখনো বাকি আছে। আমরা মূলত যে কাজটি করতে যাচ্ছি পুকুরে এটি লালন-পালন করে, ডমিস্টিকেশন করে হ্যাচারিতে এর পোনা উৎপাদন করা।
মেকং নদীর উজানে থাইল্যান্ড মাছটির প্রজননে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে এখনো সফলতা আসেনি। তবে আগামী এক দুই বছরের মধ্যে সফলতা অর্জন সম্ভব হতে পারে বলে আশা করি। তবে এই মাছ থেকে পোনা মিললে মাছে নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।
আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো খবর